অক্টোবর ২৪, ২০১০

সুনামগঞ্জের টেংরাটিলায় পুকুরের গ্যাসে রান্না


 
গ্যাস ক্ষেত্র লাগোয়া বাড়ির পুকুর। অবিরাম গ্যাসের বুদ্বুদ্ উঠছে। পুকুরের এ গ্যাস চুলোয় নিয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছেন বাড়ির মালিক। সুনামগঞ্জের টেংরাটিলায় অগ্নি-দুর্ঘটনার সেই গ্যাস ক্ষেত্রের পাশের বাসিন্দা আবুল কাশেমের পুকুরের গ্যাস শুধু তাঁর ঘরের চুলায় নয়, আশপাশের কয়েকটি বাড়ি ও দোকানে ব্যবহার হচ্ছে অনেকটা বাণিজ্যিক কায়দায়। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ বা কোনো কারিগরি দক্ষতা ছাড়া প্রাকৃতিক গ্যাসের এ রকম ব্যবহার বিপজ্জনক হলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা রয়েছেন উদাসীন।
পুকুর থেকে সরবরাহ করা গ্যাস এলাকায় ‘কাশেম গ্যাস’ নামে প্রচার রয়েছে। গ্রাহকেরা সংযোগ নেওয়ার সময় একটি লিখিত অঙ্গীকারও করেন। তাতে লেখা—‘কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সে জন্য কাশেম দায়ী না!’
দোয়ারাবাজার উপজেলার টেংরাটিলায় ছাতক (পশ্চিম) গ্যাস ক্ষেত্রে কানাডীয় জ্বালানি কোম্পানি নাইকো গ্যাস উত্তোলন শুরু করলে ২০০৫ সালের ৭ জানুয়ারি প্রথম দফা অগ্নিকাণ্ড হয়। এ আগুন প্রায় ১৫ দিন পর স্বাভাবিকভাবে নিয়ন্ত্রণে এলে আবার গ্যাস ক্ষেত্র খননকালে ছয় মাসের মাথায় একই বছরের ২৪ জুন দ্বিতীয় দফা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে উত্তোলনকাজ গুটিয়ে নাইকো চলে যায়।
এলাকাবাসী জানান, দুর্ঘটনার পর থেকে টেংরাটিলার বাড়িঘর, পুকুর, ফসলি জমি, রাস্তাঘাট দিয়ে গ্যাসের বুদ্বুদ্ উঠছে। জমিতে ঠিকমতো ফসল হয় না। আর বাড়ির পুকুরে মাছচাষও হয় না আগের মতো। সরেজমিনে দেখা গেছে, গ্যাসকূপ থেকে পুকুরের দূরত্ব প্রায় ৩০ থেকে ৪০ ফুট। দিনের ২৪ ঘণ্টাই পুকুরের পানিতে গ্যাসের বুদ্বুদ্ দেখে কাশেম নিজের কারিগরিতে প্রথমে নিজের চুলায় ব্যবহার শুরু করেন গত মার্চ মাস থেকে। পরে আশপাশের আরও ৩৪টি বাড়ি ও টেংরাবাজারের ১২টি দোকানে গ্যাস সরবরাহ করেন। পুকুরে সংযোগ পাইপ দিয়ে চারটি খুঁটি পুঁতে এবং তা প্লাস্টিকের পাইপলাইন দিয়ে বাড়ি বাড়ি সরবরাহ করা হচ্ছে।
আবুল কাশেম নিজে এ ধরনের কাজ নাইকোর খননকর্মীদের সঙ্গে থেকে শিখেছেন বলে দাবি করেন। তিনি জানান, পরিত্যক্ত গ্যাস ব্যবহার করার এ চিন্তাটি তাঁর নিজের কারিগরি দক্ষতা। পুকুরের পানির নিচে একটি বুদ্বুদের স্থানে পাকা বাক্স বসিয়ে একটি পাইপ টেনে দেন ঘরের চুলায়। সেটা চালু ও বন্ধ করার জন্য তিনি একটি সুইচও লাগান। লোকজনের চাপাচাপিতে তিনি তাদের সংযোগ দিতে বাধ্য হন। চুলা প্রতি ২০০ টাকা করে নিচ্ছেন বলে জানান তিনি।
কাশেম বলেন, ‘এত এত এক্সপার্ট সত্ত্বেও নাইকোর হাতেও তো দুর্ঘটনা ঘটল! আমার ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার কোনো আশঙ্কা নেই বলে আমি মনে করি। কারণ পুকুর থেকে যে চারটি পাইপ দিয়ে লাইন টানা হয়েছে, তার প্রতিটিতেই নিয়ন্ত্রণ সুইচ আছে। গ্যাসের চাপ বাড়লে আউটলাইন করার ব্যবস্থাও রয়েছে।’
সিলেট অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন (টি অ্যান্ড ডি সিস্টেম) সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মো. ফজলুল হক বলেন, ‘মনগড়া কারিগরিতে গ্যাসের এমন অবাধ ব্যবহার অবৈধ। তবে নিজের বাড়ির পুকুরে বলে হয়তো এ সম্পর্কে তাঁদের কেউ জানায়নি। যেকোনো কাজই যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে না হলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বা ঝুঁকি থাকেই। তবে আমাদের পর্যবেক্ষণে মনে হচ্ছে, টেংরাটিলায় এখন আগের মতো গ্যাসের চাপ নেই। তাই দুর্ঘটনার আশঙ্কাও কম।’
টেংরাটিলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘তাঁর ঘরেও “কাশেম গ্যাস” সংযোগ রয়েছে। গ্যাস ক্ষেত্রে অগ্নিকাণ্ডের পর পরিবেশ আগের মতো নেই। এলাকায় তীব্র জ্বালানির সংকট রয়েছে। একজনের ব্যক্তি-উদ্যোগে ওই সংকট কাটার একটা ব্যবস্থা হওয়ায় মানুষ উপকৃত হচ্ছে।’

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন